Blog 7: অ্যারোমাথেরাপি - ক্লিওপেট্রার রূপ রহস্য
ইজিপ্টের রানি ক্লিওপেট্রার রূপ এবং বুদ্ধির দীপ্তিতে ইতিহাসের একটি অধ্যায় যেন ঝলমলে হয়ে আছে। ৫০ খ্রীঃ পূর্বাব্দের যুবতি রানি ক্লিওপেট্রা কেবল যে পুরুষ নজরেই আকর্ষণীয় তা নয় I মেয়েদের কাছেও তিনি সমান আগ্রহের এবং ঈর্ষারও, বলা যায়| রূপ এবং গুণের বিশেষ অধিকারিনী রানি সপ্তম ক্লিওপেট্রা নজর আকর্ষণ করেছিলেন তৎকালীন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারেরও I
তার অঙ্গশৈলী এবং সৌন্দর্য আজও একইভাবে একবিংশ শতকের নারী-পুরুষকে মুগ্ধ করে I কী তার রূপের রহস্য? কী ভাবেই বা এখনও ‘জীবন্ত’ রেখেছেন নিজেকে, এবার উম্মোচন করা যাক সেই রহস্য।
প্রথমত আমরা যদি ইজিপ্টের বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপত্য এবং ভাস্কর্যের দিকে চোখ রাখি তাহলেই তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। এখানকার বিভিন্ন গুহাচিত্র এবং প্রাচীন মিশরীয় পুস্তকে ক্লিওপেট্রার রূপচর্চার রহস্যের সম্বন্ধে জানা যায়। বিশেষ করে প্রকৃতির নির্যাসকে ব্যবহার করে সৌন্দর্য্যকে ধরে রাখার একটা নিখুঁত বার্তা দেওয়া হয়েছে এইসব জায়গায়। পাশাপাশি যে বিষয়টি জানা যায়, তা হল তৎকালীন সময়ে প্রকৃতির নির্যাস উৎপন্ন করা হত খুব যত্ন করে। ভেজিটেবল ফ্যাট-এর আস্তরনের উপর হার্বের বিভিন্ন অংশগুলি স্তরে স্তরে সাজিয়ে এমনভাবে নিষ্কাশনকরা হত যাতে নির্যাস কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয়- এনফ্লিউরেজ (Enfleurage)।
রানি ক্লিওপেট্রার রূপ ধরে রাখার রহস্য যে এই প্রকৃতির দান তা একেবারে স্পষ্ট। শৌখিন রানি নিজেকে সদা আকর্ষণীয় এবং যৌবনোচ্ছল রাখার জন্য সাহায্য নিতেন সুগন্ধি চর্চার অর্থাৎ অ্যারোমাথেরাপির। কী ছিল সেই পদ্ধতি? জেনে নেওয়া যাক,
বেসিল (Basil) :- বেসিল একপ্রকার হার্ব। তৎকালীন ইজিপ্টে এই হার্ব পরিচিত ছিল রিহান (Reehan) নামে। জানা গিয়েছে, এই হার্বের পাতা থেকে উৎপন্ন তেল ছিল সেই সময়ের প্রসাধনীর একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গ। এই তেল ত্বকে যেমন প্রাকৃতিক জেল্লা এনে দেয় তেমনই স্পর্শকাতর ত্বককে রাখে একেবারে জীবাণু মুক্ত। এটাই ছিল ক্লিওপেট্রার রূপ রহস্যের প্রথম রহস্য।
কালোজিরে (Black Cumin Seed):- সাধারণত কালোজিরে আমরা তরকারিতে ফোড়ন হিসেবে ব্যবহার করি। কিন্তু ক্লিওপেট্রা কীভাবে ব্যবহার করতেন জানেন ? বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, কালোজিরেকে তৎকালীন ইজিপ্টে বলা হত হ্যাবেট বারাকা (Habet Baraka)। কালোজিরে থেকে বিশেষ উপায়ে এক প্রকার তেল উৎপন্ন করা যায়। সেই তেল স্ক্যাল্পে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করলে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্লিওপেট্রার ঘন চুলের রহস্য ছিল এটাই।
জিরেনিয়াম (Geranium):- এটি একধরনের গোলাপি বর্ণের ফুল। এই ফুলের নির্যাস নাকি ছিল সেই সময়ের সানস্ক্রিন লোশন। অর্থাৎ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য ক্লিওপেট্রাও হয়তো ব্যবহার করতেন এই ফুলের নির্যাস। কেবল ত্বকের ক্ষেত্রেই নয়, এই ফুল থেকে নিঃসৃত এসেনসিয়াল অয়েল একইভাবে চুলের ক্ষেত্রেও উপকারী। অয়েলি এবং ড্যানড্রফ মুক্ত চুল পেতে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার।
মেথি (Fenugreek):- ঐতিহাসিক নথি ঘেটে পাওয়া গিয়েছে, ক্লিওপেট্রার সদা যৌবনদীপ্ত ত্বকের রহস্য হল মেথি। মিশরীয় ভাষায় মেথি পরিচিত ‘হেলবা’ (Helba) নামে। মেথি থেকে তৈরি তেল যেমন ত্বকের বার্ধক্য কমিয়ে যৌবন ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে, তেমনই ত্বকের ক্লান্তি কমিয়ে প্রানোচ্ছল করে তোলে।
মরিঙ্গা (Moringa):-মিশরীয় গুহাচিত্র থেকে জানা যায়, মরিঙ্গা পাতার রসের সঙ্গে ফ্রাঙ্কিনসেনস, সাইপ্রেস-এর গুঁড়ো এবং গাছগাছড়ার ফারমেন্টেড রস মিশিয়ে তৈরি হত ত্বকের বলিরেখা, বার্ধক্য মুছে ফেলার বিশেষ ওষুধ। রানি ক্লিওপেট্রাও নাকি ত্বককে টানটান রাখতে মরিঙ্গারই সাহায্য নিতেন।
নেরোলি:- নেরোলি গাছের পাতা থেকে যে সুগন্ধি নির্যাস মেলে, ক্লিওপেট্রাও নাকি তা ব্যবহার করতেন। সৌখিন রানি যখন রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেন, তখন জাহাজের পাল এই সুগন্ধিতে ডুবিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিতেন যাতে তাঁর যাত্রা সুগন্ধিময় হয়। পাশাপাশি এই নির্যাস সুন্দর ত্বকের জন্যও ব্যবহার করতেন যা ত্বককে সুন্দর করে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই নির্যাস নাকি তিনি সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহার করতেন। তার যাত্রা পথে এই সুগন্ধি তাঁর মুড ভাল রাখতেও সাহায্য করত।
গোলাপ (Rosa sancta):- গোলাপ প্রসঙ্গে শেক্সপিয়রের উক্তি আমাদের সকলের জানা অর্থাৎ ‘গোলাপকে যে নামেই ডাকো, গোলাপ গোলাপই’। ইজিপ্টে গোলাপকে বলা হয় “The Queen of Flowers” অর্থাৎ ফুলের রানি। তাই এই ফুল, রানি অর্থাৎ ক্লিওপেট্রার রূপচর্চার তালিকা থেকে বাদ যায়নি। নিত্যদিনের স্নানের ক্ষেত্রে গোলাপের পাপড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। শুধু তাই নয় ক্লিওপেট্রার মসৃণ, কোমল ত্বকের রহস্যও হল গোলাপ।
যদি ক্লিওপেট্রার মতো ত্বক এবং চুলের অধিকারী হতে চান তাহলে প্রকৃতিক নির্যাস অর্থাৎ এসেনসিয়াল অয়েল এবং অ্যারোমাথেরাপি-র সাহায্য নিতে হবে আপনাকেও।
এই ব্লগটি পড়ুন ইংরেজিতেও